ছোট বাচ্চাদের বদনজর মুক্তির জন্য দোয়া পড়া:-

বদনজর থেকে বাঁচাতে নবীজি (সা.) ছোটদের কোলে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন হাদিসের গ্রন্থগুলোতে এমন অনেক বর্ণিত হয়েছে। এখানে একটি দোয়া উদ্ধৃত করা হচ্ছে। হজরত হাসান ও হুসাইনকে (রা.) নবীজি (সা.) এই বাক্যগুলো দিয়ে ফুঁ দিতেন—

আরবি :

أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ

➜  উচ্চারণ : উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।

অর্থ : আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)

পরিশেষে লক্ষণীয় যে, বদনজরের বিষয়টি সত্য। যে কারও ওপর বদনজর লাগতে পারে। তাই সতর্ক থাকার পাশাপাশি সবসময় আমলের মধ্যে থাকা উত্তম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর দোয়া-দরুদ পড়া। এছাড়াও সুরা ফালাক ও নাসের মাধ্যমে মানুষ ও জিনের যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।


=========================


أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

➜  উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লিআম্মাতিন।’

অর্থ : ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরকারীর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (বুখারি)

সুরা ইখলাস - (৩) বার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’ (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

সুরা ফালাক্ব - (৩) বার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক্ব; মিন শাররি মা খালাক্ব; ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব; ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ; ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ।

সুরা নাস- (৩) বার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কুল আউজু বিরাব্বিন নাস; মালিকিন্ নাস; ইলাহিন্ নাস। মিন্ শররিল ওয়াস্ওয়াসিল খান্নাস; আল্লাজি ইউওয়াসয়িসু ফি ছুদুরিন নাস। মিনাল ঝিন্নাতি ওয়ান নাস।

আল্লাহ সবাইকে বদনজর থেকে হেফাজত রাখুন, আমিন।


=========================


➜  শিশুর কপালে কালো ফোঁটা না দিয়ে যে দোয়া করবেন:-

নবজাতক শিশুকে যাবতীয় বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য কপালের এক পাশে বড় করে কালো ফোঁটা দেয়া হয়। বিশেষ করে নবজাতককে যখন ঘরের বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় তখন প্রত্যেক মা এ কাজটি করেন। ইসলাম কোনোভাবেই এটিকে সমর্থন করে না।

কালো ফোটা কিংবা টিপ বদ নজর থেকে নবজাতককে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে না। বরং যখন কোনো নবজাতক জন্ম গ্রহণ করতো তখন সাহাবায়ে কেরাম তাদের সন্তানদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যেতেন।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সব নবজাতকদের মুখে খেজুর চিবিয়ে দিতেন অতঃপর বরকতের দোয়া করতেন। নবজাতক ভূমিষ্ঠ হলে গোসল করানোর পর তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দিতেন।

প্রত্যেক নবজাতকের জন্য তিনি বরকতের দোয়া করেছেন এবং দুনিয়ার যাবতীয় বদ নজর থকে রক্ষায়ও তিনি দোয়া করেছেন। সহিহ বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত হাসান ও হজরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা (উভয়ের জন্য আল্লাহর কাছে এভাবে) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-

أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ وَّمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

➜  উচ্চারণ : ‘উয়িজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’ (কানজুল উম্মাল)

অর্থ : সব শয়তান, কীটপতঙ্গ ও বদনজর থেকে তোমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে দিচ্ছি।


যদি নবজাতক শিশু একজন হয় তবে উয়িজুকা (اُعِيْذُكَ), দুই জন হলে উয়িজুকুমা (اُعِيْذُكُما), অনেক শিশু হলে উয়িজুকুম (اُعِيْذُكُمْ)

পাশাপাশি নবজাতক শিশু সন্তানদের জন্য সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৪ কুলসহ হাদিসের দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য যে, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এই দোয়ার মাধ্যমে তাঁর পুত্র হজরত ইসহাক এবং হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে ঝাড়-ফুঁক করতেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবির শেখানো দোয়ার মাধ্যমে নবজাতক শিশুর কপালে কালো ফোঁটা না দিয়ে এ দোয়ার মাধ্যমে বদনজর ও ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

তিন কুল পড়ার ফজিলত ও আমলের পদ্ধতি

বদনজর থেকে বাঁচতে যে দোয়া ও আমল করবেন

Working Routines